লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অস্কারের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। তিনবছর পর স্বাভাবিক এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার বিজয়ীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস খ্যাত এই চলচ্চিত্র পুরস্কারের ৯৪তম আসরে সায়েন্স ফিকশন ব্লকবাস্টার ডুন-এর জয়জয়কারের মধ্যে সেরা সিনেমার পুরস্কার জিতেছে পরিচালক সিয়ান হেডারের চলচ্চিত্র ‘কোডা’। একটি মেয়ের গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। যার পুরো পরিবার বধির এবং পরিবারের একমাত্র সদস্য ওই মেয়েটিরই শুধু শ্রবণ ক্ষমতা রয়েছে।
জোনস নামের সেই মেয়েটির চরিত্রে অভিনয় করেছেন এমিলিয়া জোনস। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, কোডা এবারের অস্কার আসরে তিনটি বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছিল। জোনসের বাবার চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার পুরস্কার জিতে ইতিহাস গড়েছেন ট্রয়ি কোটসুর।
অস্কারের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় বধির শিল্পী যাকে অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস দেয়া হল। এর আগে প্রথম বধির শিল্পী হিসেবে মারলি ম্যাটলিন ১৯৮৭ সালে ‘চিলড্রেন অব আ লেসার গড’ সিনেমায় অস্কার জিতে নেন।
বিশ্ব চলচ্চিত্র জগতের মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডসের ৯৪তম আসরে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জিতেছেন হলিউড তারকা উইল স্মিথ। সিএনএন জানিয়েছে, ‘কিং রিচার্ড’ সিনেমার জন্য অস্কার জিতেছেন হ্যাংকক খ্যাত এই অভিনেতা। এটাই তার ক্যারিয়ারের প্রথম অস্কার। রিচার্ড উইলিয়াম চরিত্রে অভিনয়ের স্বীকৃতিতে তার নাম ঘোষণার পর মঞ্চে পুরস্কার নিতে এসে কেঁদে ফেলেন তিনি। এর আগে মঞ্চে উপস্থাপক কৌতুক অভিনেতা ক্রিস রককে চড় মারার ঘটনায় ক্রিস রক এবং অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষমা চান স্মিথ। ভিডিওতে দেখা যায়, উইল স্মিথ হাস্যরসের মধ্যেই হঠাৎ নিজের আসন ছেড়ে স্টেজে উঠে উপস্থাপক ক্রিস রককে চড় মেরে নিজ জায়গায় ফিরে আসেন। সেখানে রাগান্বিত হয়ে কথা বলতে থাকেন। যদিও ব্যাপারটাকে মজার ছলে নিয়ে শো চলমান রাখেন ক্রিস রক।
সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেলেন জেসিকা
দ্য আইস অফ ট্যামি ফ্যে সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ের জন্য প্রধান চরিত্রে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন জেসিকা চেস্টিন। তার সাথে মনোনয়ন পেয়েছিলেন, দ্য ডটার সিনেমার অলিভিয়া কলম্যান। প্যারারাল মাদার্স সিনেমার পেনেপল ক্রুজ। বিং রিকার্ডোস চলচ্চিত্রের জন্য নিকোলি কিডম্যান এবং স্পেন্সারের জন্য ক্রিস্টিন স্টুয়ার্ট।
অন্যান্য বিভাগে বাজিমাত করেছে ডুন সিনেমা
এ বছর বাজিমাত করে দিয়েছে সায়েন্স ফিকশন ব্লকবাস্টার ডুন সিনেমা। অস্কারের অন্যান্য পুরস্কার- বেস্ট সাউন্ড: ‘ডুন’। সেরা অরিজিনাল স্কোর ‘ডুন’-এর জন্য হ্যানঝ জিমার। বেস্ট ফিল্ম এডিটিং: ‘ডুন’-এর জন্য জো ওয়াকার। বেস্ট প্রোডাকশন ডিজাইন: ‘ডুন’। বেস্ট সিনেমাটোগ্রাফি: ‘ডুন’-এর জন্য গ্রেগ ফ্রাসার। বেস্ট ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস: ‘ডুন’। বেস্ট ডকুমেন্টারি শর্ট সাবজেক্ট: ‘দ্য কুইন অব বাস্কেটবল’। সেরা ডকুমেন্টারি: ‘সামার অব সোল’। বেস্ট অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম: ‘দ্য উইন্ডশিল্ড উইপার’। সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্ট ফিল্ম: ‘দ্য লং গুডবাই’। বেস্ট মেকআপ অ্যান্ড হেয়ারস্টাইল: ‘দ্য আইজ অব টেমি ফে’। পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেত্রী: আরিয়ানা ডিবোস, ছবি ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’। পার্শ্ব চরিত্রের সেরা অভিনেতা: ট্রয় খটসর, ছবি ‘কোডা’। বেস্ট অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম: ‘এনকান্টো’।বেস্ট অ্যানিমেটেড শর্ট ফিল্ম: দ্য উইন্ডশিল্ড ওয়াইপার। বেস্ট ইন্টারন্যাশনাল ফিচার: ‘ড্রাইভ মাই কার’। সেরা পরিচালক: দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগ সিনেমার পরিচালক জেইন ক্যম্পিওন। বেস্ট অরিজিনাল সং: নো টাইম টু ডাই। বেস্ট অরিজিনাল স্ক্রিনপ্লে: বেলফাস্ট। বেস্ট এডাপ্টেট স্ক্রিনপ্লে: কোডা। বেস্ট কাস্টিউম ডিজাইন: ক্রুয়েলা।
সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলো জাপান
অস্কারে সেরা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতলো জাপানের ‘ড্রাইভ মাই কার’ চলচ্চিত্র। সিনেমাটির পরিচালক রিয়ুসুকে হামাগুচির হাতে ট্রফি তুলে দিয়েছেন আমেরিকান অভিনেত্রী টিফানি হ্যাডিশ ও কানাডিয়ান অভিনেতা সিমু লিউ। ‘ড্রাইভ মাই কার’ অস্কারের সেরা চলচ্চিত্র শাখায় মনোনীত প্রথম জাপানি ছবি। এর আগে বাফটা, গোল্ডেন গ্লোব, ক্রিটিকস চয়েস মুভি অ্যাওয়ার্ডস, ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্পিরিট অ্যাওয়ার্ডসসহ আরও অনেক পুরস্কার জিতেছে সিনেমাটি। জাপানিজ কথাসাহিত্যিক হারুকি মুরাকামির ছোটগল্প অবলম্বনে তৈরি হয়েছে ‘ড্রাইভ মাই কার’। স্ত্রীর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন একজন অভিনেতা ও পরিচালকের জীবনকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে ছবিটির গল্প।
সেরা পরিচালক হলেন নিউজিল্যান্ডের এক নারী!
এবারের অস্কারে সেরা পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের নারী পরিচালক জেইন ক্যাম্পেইন। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডাও একজন নারী। ৬৭ বছর বয়সী এই নারী পরিচালক ও প্রযোজক ‘দ্য পাওয়ার অফ দ্য ডগ’ সিনেমার জন্য অস্কারে সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন। সাইকোলজিক্যাল ড্রামা ধাঁচের সিনেমাটির বেশিরভাগ শুটিং নিউজিল্যান্ডে হলেও এটি গ্রীস, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার সহ-প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে। ১৯৬৭ সালে এই নামেই রচিত এক উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে। ভালোবাসা, হিংসা, বিদ্বেষ, পুরুষতন্ত্র, যৌনতার মিশেলে তৈরি মনস্তাত্বিক ধারার সিনেমাটি বক্স সিনেমা বোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়িয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।